লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা ও মন্ত্র | লক্ষ্মী পাঁচালি বাংলা | Lakshmi Panchali in Bengali

Share the post

লক্ষ্মীর পাঁচালী, যা লক্ষ্মী ব্রতো কথা নামেও পরিচিত, একটি ধর্মগ্রন্থ যা ভক্তরা, বিশেষ করে মহিলারা তাদের গৃহে শান্তি ও সুখ লাভের জন্য পাঠ করেন। এটি লক্ষ্মী পূজার সময় ভক্তদের দ্বারা পাঠ করা হয়। ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী প্রতিটি ঘরে ঘরে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে পূজিত হন।

Lakshmi Panchali

লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করে সরাসরি কোনো লাভ না হলেও, এটা বিশ্বাস করা হয় যে এটি পড়ার পর জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করতে পারে। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে এটি পড়ার পর মানুষের জীবনে বাধা অতিক্রম করতে এবং সৌভাগ্য আনতে সাহায্য করতে পারে।

আশা করি এটা কাজে লাগবে!

লক্ষ্মী পাঁচালি

লক্ষ্মী পাঁচালি ব্রতকথা ও মন্ত্র :



শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন,
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।
লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ,
বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।
হেনকালে বীণা হাতে আসি মনিুবর,
হরি গুণগানে মত্ত হইয়া বিভোর।
গান সম্বরি য়া উভে বন্দনা করিল,
বসিতে আসন তারে নারায়ণ দিল।
মধুর বচনে লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তায়,
কিবা মনে করি মনিু আসিলে হেথায়।
কহে মনিু তুমি চিন্ত জগতের হিত,
সবার অবস্থা আছে তোমার বিদিত।
সুখেতে আছয়ে যত মর্ত্যবাসীগণ,
বিস্তারিয়া মোর কাছে করহ বর্ণন।
লক্ষ্মীমার হেন কথা শুনি মনিুবর,
কহিতে লাগিলা তারে জড়ি দইু কর।
অপার করুণা তোমার আমি ভাগ্যবান,
মর্ত্যলোকে নাহি দেখি কাহার কল্যাণ।
সে থায় নাই মা আর সুখ শান্তি লেশ,

দুর্ভিক্ষ অনলে মাগো পুড়িতেছে দেশ।
রোগ-শোক নানা ব্যাধি কলিতে সবায়,
ভুগিতেছে সকলেতে করে হায় হায়।
অন্ন-বস্ত্র অভাবেতে আত্মহত্যা করে ,
স্ত্রী-পুত্র ত্যাজি সবাই যায় দেশান্তরে ।
স্ত্রী-পুরুষ সবে করে ধর্ম পরিহার,
সদা চুরি প্রবঞ্চনা মিথ্যা অনাচার।
তুমি মাগো জগতের সর্বহিতকারী,
সুখ-শান্তি সম্পত্তির তুমি অধিকারী।
স্থির হয়ে রহ যদি প্রতি ঘরে ঘরে ,
তবে কি জীবের এত দুঃখ হতে পারে ।
নারদের বাক্য শুনি লক্ষ্মী বিষাদিতা,
কহিলেন মনিু প্রতি দোষ দাও বথৃা।

নিজ কর্মফলে সবে করে দুঃখভোগ,
অকারণে মোর প্রতি কর অনযুযোগ।
শুন হে নারদ বলি যথার্থ তোমায়,
মম অংশে জন্ম লয় নারী সমদুয়।
তারা যদি নিজ ধর্ম রক্ষা নাহি করে ,
তবে কি অশান্তি হয় প্রতি ঘরে ঘরে ।
লক্ষ্মীর বচন শুনি মুনি কহে ক্ষুণ্ন মনে ,
কেমনে প্রসন্ন মাতা হবে নারীগণে ।
কিভাবেতে পাবে তারা তব পদছায়া,
দয়াময়ী তুমি মাগো না করিলে দয়া।
মনিুর বাক্যে লক্ষ্মীর দয়া উপজিল,
মধুর বচনে তারে বিদায় করিল।
নারীদের সর্বদু্ঃখ যে প্রকারে যায়,
কহ তুমি নারায়ণ তাহার উপায়।
শুনিয়া লক্ষ্মীর বচন কহে লক্ষ্মীপতি ,
কি হেতু উতলা প্রিয়ে স্থির কর মতি ।
প্রতি গুরুবারে মিলি যত বামাগণে ,
করিবে তোমার ব্রত ভক্তি যুক্ত মনে ।

নারায়ণের বাক্যে লক্ষ্মী অতি হৃষ্টমন,
ব্রত প্রচারিতে মর্ত্যে করিল গমন।
মর্ত্যে আসি ছদ্মবেশে ভ্রমে নারায়ণী,
দেখিলেন বনমধ্যে বদ্ধৃা এক বসি য়া আপনি ।
সদয় হইয়া লক্ষ্মী জিজ্ঞাসিল তারে ,
কহ মাগো কি হেতু
এ ঘোর কান্তারে ।
বদ্ধৃা কহে শোন মাতা আমি অভাগিনী,
কহিল সে লক্ষ্মী প্রতি আপন কাহিনী।
পতি -পুত্র ছিল মোর লক্ষ্মীযুক্ত ঘর,
এখন সব ছিন্ন ভিন্ন যাতনাই সার।
যাতনা সহিতে নারি এসেছি কানন,
ত্যাজিব জীবন আজি করেছি মনন।
নারায়ণী বলে শুন আমার বচন,
আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন।
যাও মা গৃহেতে ফিরি কর লক্ষ্মী ব্রত,
আবার আসিবে সুখ তব পূর্ব মত।
গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এয়োগণ,
করিবে লক্ষ্মীর ব্রত করি এক মন।
কহি বাছা পূজা হেতু যাহা প্রয়োজন,
মন দিয়া শুনি লও আমার বচন।
জলপূর্ণ ঘটে দিবে সিঁদুরের ফোঁটা,
আম্রের পল্লব দিবে তাহে এক গোটা।
আসন সাজায়ে দিবে তাতে গুয়া-পান,
সিঁদুর  গুলিয়া দিবে ব্রতের বিধান।
ধূপ-দীপ জ্বালাইয়া রাখিবে ধারেতে ,
শুনি বে পাঁচালী কথা দূর্বা লয়ে হাতে ।
একমনে ব্রত কথা করিবে শ্রবণ,
সতত লক্ষ্মীর মূর্তি  করিবে চিন্তন।
ব্রত শেষে হুলধ্বুনি দিয়ে প্রণাম করিবে ,
এয়োগণে সবে মিলি সিঁদুর পরিবে ।
দৈবযোগে একদিন ব্রতের সময়,

দীন দুঃখী নারী একজন আসি উপনীত হয়।
পতি তার চির রুগ্ন অক্ষম অর্জনে ,
ভিক্ষা করি অতি কষ্টে খায় দইু জনে ।
অন্তরে দেবীরে বলে আমি অতি দীনা,
স্বামীরে কর মা সুস্থ আমি ভক্তি হীনা।
লক্ষ্মীর প্রসাদে দুঃখ দূর  হইলো তার,
নীরোগ হইল স্বামী ঐশ্বর্য অপার।
কালক্রমে শুভক্ষণে জন্মিল তনয়,
হইল সংসার তার সুখের আলয়।
এইরূপে লক্ষ্মীব্রত করি ঘরে ঘরে ,
ক্রমে প্রচারিত হলো দেশ দেশান্তরে ।
করিতে যে বা দেয় উপদেশ,
লক্ষীদেবী তার প্রতি তুষ্ট সবিশেষ।
এই ব্রত দেখি যে বা করে উপহাস,
লক্ষীর কোপেতে তার হয় সর্বনাশ।
পরিশেষে হল এক অপূর্ব ব্যাপার,
যে ভাবে ব্রতের হয় মাহাত্ম্য প্রচার।
বিদর্ভ নগরে এক গৃহস্থ ভবনে ,
নিয়োজিত বামাগণ ব্রতের সাধনে ।
ভিন্ন দেশবাসী এক বণিক তনয়,
সি উপস্থিত হল ব্রতের সময়।
বহুল সম্পত্তি তার ভাই পাঁচজন,
পরস্পর অনগুত ছিল সর্বক্ষণ।
ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়,
বলে এ কিসের ব্রত এতে কিবা ফলোদয়।
বামাগণ বলে শুনি সাধুর বচন,
লক্ষী ব্রত করি সবে সৌভাগ্য কারণ।
সদাগর শুনি ইহা বলে অহঙ্কারে ,
অভাবে থাকিলে তবে পূজিব উহারে ।
ধনজন সুখভোগ যা কি ছুসম্ভব,

সকল আমার আছে আর কি বা অভাব।
কপালে না থাকে যদি লক্ষ্মী দিবে ধন,
হেন বাক্য কভুআমি না করি শ্রবণ।
ধনমদে মত্ত হয়ে লক্ষ্মী করি হেলা,
নানা দ্রব্যে পূর্ণ তরি বানিজ্যেতে গেলা।
গর্বিত জনেরে লক্ষ্মী সইতে না পারে ,
সর্ব দুঃখে দুঃখী মাগো করেন তাহারে ।
বাড়ি গেল, ঘর গেল, ডুবিল পূর্ণ তরি ,
চলে গেল ভ্রাতৃভাব হল যে ভিখারী।
কিদোষ পাইয়া বিধি করিলে এমন,
অধম সন্তান আমি অতি অভাজন।
সাধুর অবস্থা দেখি দয়াময়ী ভাবে ,
বঝুাইব কেমনে ইহা মনে মনে ভাবে ।
নানা স্থানে নানা ছলে ঘুরাইয়া ঘানি ,
অবশে ষে লক্ষ্মীর ব্রতের স্থানে দিলেন আনি ।
মনেতে উদয় হল কেন সে ভিখারী,
অপরাধ ক্ষম মাগো কুপুত্র ভাবি য়া।
অহঙ্কার দোষে দেবী শিক্ষা দিলা মোরে ,
অপার করুণা তাই বঝুালে দীনেরে ।
বঝুালে যদি বা মাগো রাখগো চরণে ,
ক্ষমা কর ক্ষমাময়ী আশ্রিত জনেরে ।
সত্যরূপিনী তুমি কমলা তুমি যে মা,
ক্ষমাময়ী নাম তব দীনে করি ক্ষমা।
তুমি বিনা গতি নাই এ তিন ভুবনে ,
স্বর্গেতে  স্বরর্গে লক্ষ্মী ত্রিবিধ মঙ্গলে ।
তুমি মা মঙ্গলা দেবী সকল ঘরেতে ,
বিরাজিছ মা তুমি লক্ষ্মী রূপে ভূতলে ।
দেব-নর সকলের সম্পদরূপিনী,
জগৎ সর্বস্ব তুমি ঐশ্বর্যদায়িনী।
সর্বত্র পূজিতা তুমি ত্রিলোক পালিনী,
সাবিত্রী বিরিঞ্চিপুরে বেদের জননী।

ক্ষমা কর এ দাসের অপরাধ যত,
তোমা পদে মতি যেন থাকে অবি রত।
শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ট তারা পরমা প্রকৃতি ,
কোপাদি বর্জিতা তুমি মূর্তিমতি ধৃতি ।
সতী সাধ্বী রমণীর তুমি মা উপমা,
দেবগণ ভক্তি মনে পূজে সবে তোমা।
রাস অধিষ্ঠাত্রী দেবী তুমি রাসে শ্বরী,
সকলেই তব অংশ যত আছে নারী।
কৃষ্ণ প্রেমময়ী তুমি কৃষ্ণ প্রাণাধিকা,
তুমি যে ছিলে মাগো দ্বাপরে রাধিকা।
প্রস্ফুটিত পদ্মবনে তুমি পদ্মাবতী,
মালতি কুসুমগুচ্ছে তুমি মা মালতি ।
বনের মাঝারে তুমি মাগো বনরাণী,
শত শঙ্গৃ শৈলোপরি শোভিত সুন্দরী।
রাজলক্ষ্মী তুমি মাগো নরপতি পুরে ,
সকলের গৃহে লক্ষ্মী তুমি ঘরে ঘরে ।
দয়াময়ী ক্ষেমঙ্করী অধমতারিণী,
অপরাধ ক্ষমা কর দারিদ্র্যবারিণী।
পতিত উদ্ধার কর পতিতপাবনী,
অজ্ঞান সন্তানে কষ্ট না দিও জননী।
অন্নদা বরদা মাতা বিপদনাশিনী,
দয়া কর এবে মোরে মাধব ঘরণী।
এই রূপে স্তব করি ভক্তিপূর্ণ মনে ,
একাগ্র মনেতে সাধুব্রত কথা শোনে ।
ব্রতের শেষে নত শিরে করি য়া প্রণাম,
মনেতে বাসনা করি আছে নিজধাম।
গৃহেতে আসিয়া বলে লক্ষ্মীব্রত সার,
সবে মিলি ব্রত কর প্রতি গুরুবার।
বধুরা অতি তুষ্ট সাধুর বাক্যেতে ,
ব্রত আচরণ করে সভক্তি মনেতে ।
নাশিল সাধুর ছিল যত দষ্টু সহচর,

দেবীর কৃপায় সম্পদ লভিল প্রচুর।
আনন্দে পূর্ণিত দেখে সাধুর অন্তর,
পূর্ণতরী উঠে ভাসি জলের উপর।
সাধুর সংসার হল শান্তি ভরপুর,
মিলিল সকলে পুনঃ ঐশ্বর্য প্রচুর।
এভাবে নরলোকে হয় ব্রতের প্রচার,
মনে রেখ সংসারেতে লক্ষ্মীব্রত সার।
এ ব্রত যে রমণী করে এক মনে ,
দেবীর কৃপায় তার পূর্ণ ধনে জনে ।
অপুত্রার পুত্র হয় নির্ধনের ধন,
ইহলোকে সুখী অন্তে বৈকুন্ঠে গমন।
লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ই মধুর,
অতি যতনেতে রাখ তাহা আসন উপর।
যে জন ব্রতের শেষে স্তব পাঠ করে ,
অভাব ঘুচিয়া যায় লক্ষ্মীদেবীর বরে ।
লক্ষ্মীর পাঁচালী কথা হল সমাপন,
ভক্তি করি বর মাগো যার যাহা মন।
সিঁথিতে সিঁদুর দাও সব এয়োমিলে ,
উলুধ্বুনি কর সবে অতি কৌতুহলে ।
দইু হাত জোড় করি ভক্তিযুক্ত মনে ,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে ,
নমস্কার করহ সবে দেবীর চরণে । 

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র :

ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ সৃণিভির্যাম্য সৌম্যয়োঃ
পদ্মাসনাস্থাং ধায়েচ্চ শ্রীয়ং ত্রৈলোক্য মাতরং।
গৌরবর্ণাং স্বরূপাঞ্চ সর্বালঙ্কার ভূষিতাম্,
রৌক্নোপদ্মব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর স্তব মন্ত্র :

ওঁ ত্রৈলোক্য-পূজি তে দেবী কমলে বিষ্ণুবল্লভে ,
যথা ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা ভব ময়ি স্থিরা।

ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতির্হরিপ্রিয়া,
পদ্মা পদ্মালয়া সম্পৎপ্রদা শ্রী: পদ্মধারিণী।
দ্বাদশৈ তানি নামানি লক্ষীং সম্পূজ্য য: পঠেৎ,
স্থিরা লক্ষীর্ভবেত্তস্য পুত্রদারাদিভি : সহ।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মীর প্রণাম মন্ত্র :

ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে
সর্বতঃ পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী।


লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করার সেরা সময় কোনটি?

লক্ষ্মী পূজার উৎসবের সময় প্রায়ই লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করা হয়, যা সাধারণত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে পড়ে। তবে বৃহস্পতিবার বা অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানেও এটি পাঠ করা যেতে পারে।

অহিন্দুরা কি লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করতে পারে?

হ্যাঁ, লক্ষ্মীর পাঁচালী হল এমন একটি পাঠ যা যে কোনও ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পটভূমির ব্যক্তিদের দ্বারা পাঠ করা যেতে পারে যারা দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ এবং নির্দেশনা চান।

লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠের সাথে কি কোন নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান জড়িত?

যদিও কোনও কঠোর আচার-অনুষ্ঠান নেই, তবে প্রদীপ জ্বালানো, ফুল দেওয়া এবং গভীর ভক্তির সাথে পাঁচালী পাঠ করার প্রথা রয়েছে।


Share the post

মন্তব্য করুন